রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সরকারি চাকরির বাজারে কোটার আধিপত্য

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩
136 ভিউ
সরকারি চাকরির বাজারে কোটার আধিপত্য

কক্সবাংলা ডটকম(১৭ আগস্ট) :: সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা লেখা পোস্ট করেন গত এপ্রিলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২৩ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখাটিতে লাইক দেন বা সাড়া দেন। ২ হাজার ৪০০ জন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া ৭৮৫ জন তা শেয়ার করেন।

পোস্টটি ছিল সরকারি চাকরি নিয়ে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ‘কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটি বড় বাধা’। এই পোস্টের পর সাবেক আমলা মিলনের ফেসবুক বন্ধুরা এর ওপর হামলে পড়েন। সেখানে কোটার পক্ষে-বিপক্ষে কথার ঝড় ওঠে। এসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, কোটা নিয়ে মানুষ কতটা হতাশ।

সরকারের প্রায় ৭৩ শতাংশ কর্মচারীর নিয়োগ হয় কোটায়। তারা সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বা ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডে চাকরি করেন। সে হিসেবে বেশির ভাগ চাকরিই হয় কোটার ভিত্তিতে। আগে সরকারি চাকরির বিন্যাস শ্রেণি অনুযায়ী করা হলেও এখন তা গ্রেড অনুযায়ী করা হয়। ১ থেকে ৯ গ্রেড প্রথম, ১০ থেকে ১২ গ্রেড দ্বিতীয়, ১৩ থেকে ১৬ তৃতীয় এবং ১৭ থকে ২০তম গ্রেড হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি।

২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে তা বহাল থাকে। সরকারের মোট জনবলের ৭৩ শতাংশই হচ্ছে এই দুই শ্রেণির। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি ২৭ শতাংশ। এগুলো নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির গুরুত্ব কম থাকলেও চাকরির বিশাল বাজারের জন্য তা আবার গুরুত্বপূর্ণও। কারণ এসব চাকরিকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম হচ্ছে। অনিয়মের সঙ্গে যখন কোটা যুক্ত হয়, তখন তা মেধাবীদের জন্য বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শতভাগ কোটা পূরণ করা হয় ৬ ক্যাটাগরিতে। এতিম ও প্রতিবন্ধী ১০, মুক্তিযোদ্ধা ৩০, নারী ১৫, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫, আনসার ও ভিডিপি ১০ এবং জেলা কোটা ৩০ শতাংশ। এই ছয় ক্যাটাগরির যোগফল ১০০, অর্থাৎ পুরোটাই কোটা। সরকারি চাকরির বড় অংশে মেধাবীদের কোনো জায়গা নেই।

প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কোটা পদ্ধতিতেও সংস্কার করা দরকার। জেলা কোটা এক হিসেবে মেধা কোটাও। তবে তা ওই জেলায় সীমাবদ্ধ। এই জেলা কোটার পরিসরটা বাড়ানো উচিত। তবে কোটা গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে। সেখানে কোটা মুক্ত করে সরকার দারুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোটা সংস্কারের পাশাপাশি নিয়োগের অনিয়ম বন্ধ করা খুব জরুরি।

গত মে মাসে প্রকাশিত সরকারি কর্মচারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারের মোট জনবল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ ও দ্বিতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৬ লাখ ৩ হাজার ৪৩৩ ও চতুর্থ শ্রেণির ৪ লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। আর ৫ হাজার ১০৩ জন এই শ্রেণিবিন্যাসের বাইরে রয়েছেন। মোট ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ কর্মচারীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১০ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ জন; যা মোট কর্মচারীর ৭২ দশমিক ৯১ বা ৭৩ শতাংশ।

গত ২৪ এপ্রিল সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন তার ফেসবুক পেজে আরও লেখেন, ‘সরকারি ১১-১৬ গ্রেডের নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা চালু রেখেছে সরকার। হয়তো সামাজিক বৈষম্য নিরসনে তা চালু রাখা হয়েছে। এটা নিয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করতে চাচ্ছি না। কিন্তু পদ ও পদবির মেধাভিত্তিক চর্চা বা কোয়ালিটি নিয়োগের জন্য কোটা একটা বড় বাধা, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জানতে চাইলে মাহবুব কবীর মিলন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

তবে মিলনের পোস্টে তার ফেসবুক বন্ধুদের মধ্যে কোটা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যকারীই বেশি। তাদের মন্তব্য এতটাই তির্যক যে এসব মন্তব্য হতাশার সঙ্গে কোটার জাঁতাকলে পিষ্টদের দুর্দশার গল্পও উঠে আসে। তাদের মধ্যে মতিয়ার রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘কোটা পদ্ধতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে সব নিয়োগ হোক। ডিগবাজির নিয়োগ বন্ধ হোক।’

তানভির হুসাইন নামে একজন লিখেছেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ আলমগীর হাসান লিখেছেন, ‘কোটা এক জঘন্য সিস্টেম। যারা ভুক্তভোগী তারাই শুধু বোঝেন। কোটার কারণে কত অযোগ্য আজ লিডিং পজিশনে। আর মেধাবীরা রাস্তায় ঘুরছে।’

আরিফুল ইসলাম আরিফ লিখেছেন, ‘ ১১-২০ গ্রেড পর্যন্ত কোটামুক্ত নিয়োগ চাই, মেধাবীদের সুযোগ চাই।’

ইতিবাচক মন্তব্যও রয়েছে। তবে তা খুবই কম। সুব্রত দাশ লিখেছেন, ‘কোটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বা জাতির জন্য প্রয়োজন, কিন্তু সেটাকে মাত্রার মধ্যে রেখে।’

সাংবিধানিক ক্ষমতায় সরকার চাকরিতে কোটাব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে; বিশেষ করে অনগ্রসর এবং সুবিধাবঞ্চিত অংশকে কাজের অধিকার দিতে। একই সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হওয়া থেকে রক্ষা করা এ কোটার উদ্দেশ্য। তবে কোটা নির্দিষ্ট করা থাকলেও চাকরির জন্য যে পরীক্ষা আছে তাতে অংশ নিতে হয় এবং উত্তীর্ণ হতে হয়। একটা মান আছে, সেই মান পর্যন্ত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। এমন না যে কেউ ফেল করেছে তাকে কোটায় চাকরি দেওয়া হচ্ছে।

জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা জানান, প্রজাতন্ত্রের কর্ম বিভাগে সংস্কার দরকার। কারণ প্রায় ১৪ লাখ কর্মীর কর্ম বিভাগের স্তর বিন্যাস ঠিক নেই। সংস্কার হলে উপযুক্ত জনবল নিয়োগ করা সহজ এবং অর্থ সাশ্রয় হবে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বিভ্রান্ত হবেন না। এখন কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় বিশৃঙ্খলা চলছে। বিভিন্ন দপ্তর একই সময়ে নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করে। ফলে প্রতিযোগী প্রার্থী একটা পরীক্ষায় হাজির হলে অন্যগুলোতে হাজির হতে পারেন না।

এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যে পদের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করা হয় তার থেকেও বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী আবেদন করলে অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রার্থী ভীষণ চাপে পড়েন। এতে বৈষম্য হয়। আবার কিছু দপ্তর প্রতিষ্ঠান সারা বছর নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্টরা প্রতিটি মিটিংয়ের জন্য সম্মানী নেন। সেটা ১০ মিনিট বা ১ ঘণ্টার মিটিং হোক।

সম্মানীর জন্য নানান ছুতোয় মিটিং সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন নিয়োগ কমিটির অনেক সদস্য আছেন যারা মাসে ৫০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা সম্মানী পান। তারা নিয়োগ কমিটিতে ঢোকার জন্য তক্কে তক্কে থাকেন। এভাবে একটি কমিটিতে কমপক্ষে চারজন সদস্য থাকেন। সে হিসেবে একটি নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয় কয়েক লাখ টাকা। কর্ম বিভাগ সংস্কার করা হলে এই ধরনের অহেতুক খরচ থেকে সরকার রেহাই পাবে।

জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা যে সংস্কার চাচ্ছেন তা মোটাদাগে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত হবে। এগুলো হচ্ছে সাপোর্টিং স্টাফ স্তর, ব্যবস্থাপনা স্তর এবং পলিসি স্তর। এই তিনটি স্তর সব সময় আছে। কিন্তু দপ্তরগুলো একেকটা একেক বিধিবিধান দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ একই বাজেট থেকে অর্থ নিচ্ছে। ওপরের তিনটি স্তরের জন্য তিনটি নিয়োগবিধি থাকতে পারে। তিনটির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট থাকবে। যোগ্যতার অতিরিক্ত কোনো যোগ্যতা থাকলে সে সেই দপ্তরের জন্য প্রযোজ্য হবে না। কারণ তার থেকে কম যোগ্যতার ব্যক্তি বৈষম্যের শিকার হবেন।

তা ছাড়া বেশি যোগ্যতার ব্যক্তিটি তার উপযুক্ত চাকরি নিয়ে অন্য দপ্তরে চলে যান। তখন ওই পদটি আবার বছরের পর বছর শূন্য থাকে। সাপোর্টিং স্টাফের জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত তার বেশি যোগ্যতার কেউ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন নাএমন ব্যবস্থা করা। সব দপ্তরে এই তিন স্তরের জন্য প্রতি বছর তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা নিলেই হবে। যোগ্য ব্যক্তিকে কমিশন মনোনীত করলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়োগ দেবে।

এতে সাধারণ মানুষ সুস্পষ্ট ধারণা পাবে, কোন স্তরের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। একই ব্যক্তিকে অসংখ্য দপ্তরের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসনের সংস্কারবাদী কর্মকর্তারা।

136 ভিউ

Posted ৩:৪৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com